২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদকে সামনে রেখে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ

ঈদকে সামনে রেখে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ - সংগৃহীত

বাসের মতো ফিটনেসবিহীন লঞ্চও প্রস্তুত ঈদে যাত্রী পরিবহনের জন্য। এর মধ্যে ৪০ বছরের পুরনো লঞ্চও রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব লঞ্চেও যাত্রী বহন করা হবে। তারা বলছেন, ফিটনেসবিহীন এসব লঞ্চ যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে; যাতে ব্যাপক জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকেও কিছু ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচল করছে বলে জানা গেছে। মাওয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে বেশির ভাগ লঞ্চই ত্রুটি নিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। এবারের ঈদে বাড়তি চাপের কারণে এই দুই ঘাটের যাত্রীরা চরম ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন পুরনো লঞ্চ নৌ নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে এবার ঈদের ছুটি পড়ছে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবার মিলে; যে কারণে ১৪ জুন বৃহস্পতিবার ও পরদিন শুক্রবার সড়ক নৌ ও রেলপথে প্রচণ্ড ভিড় পড়বে। এ দুই দিনেই বেশির ভাগ মানুষ ঘরে ফিরবেন। আর এ সুযোগটিই হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা কিছু অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ীদের। তারা এ সময় ফিটনেসবিহীন যানবাহন নিয়ে নামবে যাত্রী পরিবহনের জন্য। এরই মধ্যে রাজধানীর আপশাশে শতাধিক গ্যারেজে চলছে পুরনো লক্করঝক্কড় গাড়িগুলো ঘসে মেজে রঙচঙ করার কাজ। এগুলো ঈদের আগে দূর পাল্লার যাত্রীদের নিয়ে রাস্তায় নামবে। একই সঙ্গে নৌপরিবহনেরও কিছু অসাধু মালিক সুযোগটি হাতিয়ে নিতে প্রস্তুত। বিশেষ করে মাওয়া ও পাটুরিয়ায় যেসব নৌযান রয়েছে তার বেশির ভাগ নিয়েই যাত্রীদেরও আতঙ্ক রয়েছে। কাইউম নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি প্রতি বছর মাওয়া হয়ে ভেঙে সড়কপথে বাড়ি যান। এবার একটু বেশি আতঙ্কে আছেন। যেসব লঞ্চ পদ্মায় চলে সেগুলো নিয়ে এমনিতেই তার আপত্তি আছে। আর এবার ঝড়বৃষ্টির সময় ওই লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিতে হবে ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

কতগুলো লঞ্চ রয়েছে যার বয়স প্রায় অর্ধশত বছর। নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে চলাচলকারী এমএল শাহ আলী প্লাসের নির্মাণকাল ১৯৬০ সাল। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ নৌপথে চলাচলরত এমএল হৃদয় এক্সপ্রেস ১৯৭৪ সালে, ‘এমএল সোমা এক্সপ্রেস-১’ ১৯৭৩ সালে এবং এমএল শাহান ১৯৬৪ সালে নির্মিত হয়। অথচ আইএসও-১৯৭৬ এর সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৪০ বছরের বেশি পুরনো নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব ত্রুটিপূর্ণ নৌযানকে ফিটনেস দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঈদের আগে যাত্রীদের যেভাবে চাপ বাড়বে, তেমনি ঝড়-বাদলের দিনে নৌচলাচল ব্যবস্থা নিয়ে মানুষ একটু বেশি আশঙ্কার মধ্যে আছেন। পরে যদি ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করে তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মাওয়া ও পাটুরিয়ায় অতি মুনাফা লাভের আশায় নৌযান মালিকেরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করছে। এর মধ্যে লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিড বোটও আছে। বর্ষা মওসুম হওয়ায় এসব নৌযান নিয়ে আশঙ্কা বেশি। এর মধ্যে ওভারলোডের ঝুঁকি তো আছেই। তিনি বলেন, মন্ত্রী এবারো ঘোষণা দিয়েছেন ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করতে দেবেন না। প্রতিবারই এ ঘোষণা দেয়া হয়। গণপরিবহনের সঙ্কটে যাত্রীদের যাচাই-বাছাই করার সুযোগ হয় না। যাত্রীরা বুঝতে পারে না কোনটির ফিটনেস আছে আর কোনটির নেই।

নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে দেশের ৩২টি রুটে ২০৯টি নৌযান সদরঘাট থেকে চলাচল করবে। এর মধ্যে অনেক নৌযান রয়েছে যার দায়সারা গোছের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। শিপ সার্ভেয়ারদের অনেকেই অফিসে বসে এই সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন। আশীষ কুমার দে বলেন, বছরে একজন সার্ভেয়ার দেড় শ’ নৌযান সার্ভে করে থাকেন, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যে কারণে ত্রুটিপূর্ণ সার্টিফিকেট নিয়ে নৌযান চলাচল করে। এই সনদ ত্রুটিপূর্ণ নৌযানগুলোকে আইনের বৈধতা দিচ্ছে। আশীষ কুমার দে বলেন, দেশে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে। শুধু সদরঘাটেই নিরাপত্তা দিলে হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement