২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাজুক সড়কে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ঈদে নগর ছাড়তে হবে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের

-

নাজুক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাঝে চরম ভোগান্তি মাথায় নিয়েই এবারের কোরবানির ঈদে নগর ছাড়তে হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের। ঈদের মাত্র ক’দিন বাকি থাকলেও এখনো সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। অগণন খানাখন্দে ভরা মহানগরীসহ উত্তর ও দণি চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ সড়কগুলো। ফলে ন্যাড়া সড়ক দিয়েই গন্তব্যে ছুটে স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সড়ক সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, দণি চট্টগ্রামের রাস্তাগুলো দোহাজারি সড়ক বিভাগ রণাবেণ করে থাকে। আর উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক দেখভালের দায়িত্বে চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগ। সূত্র মতে, দোহাজারী সড়ক বিভাগের আওতায় থাকা ৩০৯ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগই সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে তিগ্রস্ত হয়েছে। এই সড়কের বিস্তীর্ণ অংশে রয়েছে বড় বড় গর্ত। নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত কক্সবাজারগামী মহাসড়কটি পুরোটাই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে দীর্ঘ দিন ধরে ন্যাড়া হয়ে রয়েছে। ফলে পুরো সড়ক জুড়ে তীব্র ঝাঁকুনির পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পেণ হচ্ছে গন্তব্যে পৌঁছাতে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে বেহাল হয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়িকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ভাঙা সড়কের গর্ত ও অধিকাংশ স্থানে নুড়ি পাথরের প্রলেপ না থাকার কারণে গাড়ি চলাচল বিঘœ হয়ে বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টদের দাবি। বিশেষ করে ব্যক্তিগত যানবাহনগুলোকে ধীর গতিতে দীর্ঘ সময় নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।
একই অবস্থা উত্তর চট্টগ্রামের সড়কগুলোরও। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুর দিকে হওয়াতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিলছে না। বরাদ্দ পেতে আরো তিন-চার মাস সময় লাগবে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, জরুরি বরাদ্দ পাওয়া গেলে বেশি তিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করা সম্ভব হতো। কিন্তু সেভাবে বরাদ্দ মেলেনি।
পুরো মহানগরী জুড়ে সড়কের চিত্র আরো নাজুক। এক দিকে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি, অন্য দিকে বিটুমিনের প্রলেপ উঠে গিয়ে ন্যাড়া সড়কে অসংখ্য গর্ত। এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, কোথাও অসংখ্য ছোটবড় গর্ত, কোথাও কার্পেটিং উঠে গেছে, কোথাও আবার গ্রামের কাঁচা সড়কের মতো অবস্থা। এমন অবস্থা কোনো নির্দিষ্ট সড়কের নয়, পুরো চট্টগ্রামের অধিকাংশ রাস্তাই যেন কঙ্কালসার হয়ে গেছে। ফলে ভাঙাচোরা রাস্তায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। যানবাহনের গতি কমে যাওয়াতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
বেশির ভাগ সড়কেরই বিটুমিনের প্রলেপ উঠে পুরো সড়ক ন্যাড়া হওয়ার পেছনে নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহারকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের একাধিক প্রকৌশলী জানান, একসময় বাংলাদেশের সড়কের জন্য ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ছিল মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত। কিন্তু দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এই গ্রেডের বিটুমিনের ব্যবহার কার্যকারিতা হারাচ্ছে। প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যেসব সড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে সেসব সড়ক গড়ে সাত থেকে ১০ বছরও টিকছে না। কিন্তু এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন। গুণগত মানে পাতলা ও বন্ডিং (বিটুমিনের কংক্রিট ধারণ মতা) কম হওয়ার কারণে গরমের মওসুমে এ ধরনের নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহারে তৈরি সড়কগুলো গলে কাদার আকার ধারণ করে। পুরো সড়ক জুড়ে ঢেউয়ের আকার ধারণ করে এবং সৃষ্টি হয় অসংখ্য ছোটবড় গর্ত। আর বৃষ্টির সময় বিটুমিন নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়কের এসব অংশে পানি ঢুকে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement