২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪ ইউনিট বন্ধ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন হ্রাস

চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ আসে আর যায়
-

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫টি। আর এসবের উৎপাদন ক্ষমতা ১৬৪১ মেগাওয়াট হলেও বর্তমান ক্ষমতা ১৫৬১ মেগাওয়াট। কিন্তু গত মঙ্গলবার দিনে ৬৮৭ মেগাওয়াট এবং ইভিনিং পিকআওয়ারে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। গ্যাস সঙ্কটে ৫৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি ইউনিটই বন্ধ। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আবার নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় গ্রিডে। ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ যন্ত্রণা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
বিভিন্ন শিল্প কারখানার তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হয় তাদের। আবার সাধারণ্যের হিসাবে তা আরো বেশি। বিদ্যুৎ সঙ্কটে চট্টগ্রামের শিল্প কারখানার উৎপাদনে যেমনি বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে, তেমনি জনমনে তীব্র অস্বস্তি শুরু হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্যাস সঙ্কটের কারণে চট্টগ্রামের বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ৩৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ ও ২ নং ইউনিট এবং শিকলবাহা ৪০ মেগাওয়াট ও সিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস সঙ্কটের কারণে শাটডাউনে থাকায় পরিস্থিতির অবনতি তীব্রতর হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বিপিডির ওয়েবসাইটে সিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে দিনে ১৩৫ মেগাওয়াট এবং সান্ধ্যকালীন পিকআওয়ারে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ২টি ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াট এবং অপর ৩টি ইউনিটের ৫০ মেগাওয়াট করে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু গত মঙ্গলবার ৫টি ইউনিট মিলে ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।
পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে দিনে ৬৫০ মেগাওয়াট এবং রাতে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে চট্টগ্রাম পিডিবির পাশাপাশি জাতীয় গ্রিড থেকেও সরাসরি লোডশেডিং করা হয় বলে সূত্র জানায়। ফলে দৈনিক লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কত তার হিসাব মিলানো দায় হয়ে পড়েছে। সূত্র মতে, চাহিদা ও উৎপাদনের মাঝে বড় ধরনের ব্যবধান থাকলেও ঘাটতি পোষাতে ন্যাশনাল গ্রিড থেকে কোনো বিদ্যুৎ সচরাচর চট্টগ্রামে দেয়া হচ্ছে না বরং উল্টো এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে বিজিএমএইএর সদস্যভুক্ত গার্মেন্ট কারখানা, চট্টগ্রাম ইপিজেডস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং গার্মেন্ট শিল্পের প্রচ্ছন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সেক্টরের খাতের রফতানিমুখী প্রায় দেড় সহস্রাধিক শিল্প কারখানার শুধু জ্বালানি তেল কিনতেই দৈনিক কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।
সূত্র মতে ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য সেমি অটো রি-রোলিং মিলগুলো সাধারণত রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত রড উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু এই ১২ ঘণ্টার মধ্যেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হলে জেনারেটর দিয়ে রি-রোলিং মিল চালানো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় দাবি করে সূত্র জানায়, এতে রডের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে, ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, চট্টগ্রামে শিল্প কারখানার জন্য প্রকৃতপক্ষে কত বিদ্যুৎ প্রয়োজন এর সঠিক পরিসংখ্যান পিডিবির কাছে নেই। ফলে যথাযথ লোড ম্যানেজমেন্ট সম্ভব হচ্ছে না বলেও এসব ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন। ভুক্তভোগী নাগরিকেরা জানান, পিডিবির হিসাবে কোনো লোডশেডিংয়ের তথ্য না থাকলেও গত বেশ কিছু দিন যাবৎ বন্দর নগরীতে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার ভেল্কিবাজি চলছে। অসহনীয় লোডশেডিং জনজীবন অতীষ্ঠ করে তুলছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পিডিবির জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মিটিং থাকায় কথা বলতে পারেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement